ঢাকা , শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
লালদিয়া-পানগাঁওয়ে ১০ বছর করমুক্ত সুবিধা পাবে ২ বিদেশি কোম্পানি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল সর্বোচ্চ আদালতের জুলাইয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা ফারাবীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে আহত জাতীয় নির্বাচনের আগে সক্রিয় আন্ডারওয়ার্ল্ড মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ গ্রেফতার ৪ পাবনায় চিরকুট লিখে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার গলায় ফাঁস দিয়ে নির্মাণ শ্রমিকের আত্মহত্যা রাঙামাটিতে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল, সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ ফেনীতে পৃথক ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু বান্দরবানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা আটক ৫ ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাসায় অগ্নিসংযোগ ককটেল বিস্ফোরণ অপহরণ হয়েছে সৌদি আরবে মুক্তিপণ আদায় বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী দেশে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে-টুকু পুলিশের ওপর হামলা চললে নিজেদের ঘরবাড়ি নিজেরাই পাহারা দিতে হবে-ডিএমপি কমিশনার রাজস্ব কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ থেকে সরে যাচ্ছে বড় ক্রেতারা ২০২৬ বিশ্বকাপ ড্রয়ের শীর্ষে আছে যারা ৫২ বছরে প্রথমবার এমন কীর্তি গড়লেন হাকিমি ৯ বছরের মধ্যে সেরা অবস্থানে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড গড়লেন শাই হোপ

ঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

  • আপলোড সময় : ২০-১১-২০২৫ ০৩:৫৫:২০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-১১-২০২৫ ০৩:৫৫:২০ অপরাহ্ন
ঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
চলতি মাসের ১০ তারিখ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত সংলগ্ন ন্যাশনাল মেডিক্যালের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। ২৮ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসেছিলেন তিনি। ফেরার পথে তাকে গুলি করেন পিস্তলধারী দুই সন্ত্রাসী। এ ঘটনায় গুলি করা দুই জনসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর চার দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। াদালতে হাজিরা দিতে এসে এমন ঘটনা কোর্ট নিরাপত্তার আওতায় পড়ে বলছেন কোর্ট সংশ্লিষ্টরা। মামুন হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে আদালত চলাকালীন। এ সময় আদালতে আসা-যাওয়া করা বিচারপ্রার্থীরা গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার নিম্ন আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের আসামি, সাক্ষী তাদের শুনানির তারিখে আসা-যাওয়া করেন। সেক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা আতঙ্কের বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কয়েক বছর আগে এই নিম্ন আদালত এলাকা থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এবার হত্যার ঘটনা আদালতপাড়ায় নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। শুধু জানের নিরাপত্তা নয়, এখানে মাল হারানোর ভয়ও রয়েছে। ঢাকার এই আদালতপাড়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীর বিচরণ ঘটে। সেক্ষেত্রে তাদের এক কোর্ট থেকে অন্য কোর্টে যাওয়ার মূল রাস্তায় (জনসন রোডের ফুটপাত) ভিড় সৃষ্টি হয়। এই ভিড়ের সুযোগ নেয় পকেটমার ও ছিনতাইকারীরা। তাদের কাছে মূল্যবান জিনিস খোয়াতে হয় পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারী, বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী সবাইকে। সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার আদালত প্রতিবেদকের পকেট থেকে আইফোন খোয়া যায়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়। ঢাকার সিএমএম কোর্ট সংলগ্ন হাজতখানা থেকে আসামি আনা-নেওয়ার কাজ করা পুলিশ সদস্য মাসুমের পকেট থেকেও খোয়া গেছে মোবাইল ফোন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিম্ন আদালতের সিনিয়র-জুনিয়র কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের ভাষ্য, আমরা বিভিন্ন ধরনের মামলার পক্ষে-বিপক্ষে লড়ে থাকি। এটা আমাদের পেশা। সেক্ষেত্রে আদালত ন্যায্য রায়ই দিয়ে থাকে। কিন্তু এমন অনেক আসামি থাকে যারা তাদের বিরুদ্ধে রায় গেলে হিংস্র হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে এটা আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপার। এ জন্য আদালতে আরও ফোর্স বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি দুর্র্ধষ আসামিদের কড়া সতর্কতার সঙ্গে আনা-নেওয়া করা দরকার। কারণ এসব আসামির হাত অনেক বড় থাকে। এমন হতে পারে তাদের আদালতে ওঠানোর সময় অনুসারীরা বাইরে থেকে আদালতে হামলা করলো; সেটিও আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে। আসামি আনা-নেওয়াসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আদালতের বিভিন্ন হাজতখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অস্ত্র রাখার দাবি জানান। এছাড়াও বিভিন্ন গেটে তল্লাশির ব্যবস্থা এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে মনে করেন। কোর্ট অঙ্গনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকীর। তিনি বলেন, ‘বর্তমান যে পরিস্থিতি দেখলাম তাতে আদালতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফোর্স আরও বাড়ানো দরকার। কারণ এটি বিচারপ্রার্থী থেকে শুরু করে আইনজীবী, বিচারক সবারই নিরাপত্তার ব্যাপার। সুতরাং কোর্ট এরিয়া যেহেতু কোতোয়ালি থানাধীন, সেহেতু এ ব্যাপারে তাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’ এছাড়া আদালতে প্রবেশের বিভিন্ন গেটে বাধ্যতামূলক চেকপোস্ট বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেন তিনি। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কোর্ট অঙ্গনে টহল বাড়িয়েছি। এছাড়াও ফুট-প্যাট্রোল, মোবাইল প্যাট্রোল ও হোন্ডা প্যাট্রোল জোরদার করা হচ্ছে। এটি কি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন হত্যার পর থেকেই জোরদার করা হচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এটি আগেও ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা আরও কঠোর হচ্ছি। নিরাপত্তার সার্বিক দিক এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দাবির বিষয়ে কোর্ট চত্বরের দায়িত্বে থাকা প্রসিকিউশন বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোর্ট অঙ্গন যেহেতু আমার আওতাভুক্ত, সেহেতু এটা তো আমারই দেখতে হবে। কোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলেছি। বলে দিয়েছি সন্দেহজনক লোকদের কোর্টে প্রবেশের সময় চেক করার জন্য। সবাই ঠিকঠাক জায়গা মতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা সে খবরও নিই।’ কতজন পুলিশ সদস্য পুরো কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সব কোর্ট মিলিয়ে ৫৪৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে আছেন। পুলিশ ও নিরাপত্তা প্রহরী মিলিয়ে মহানগরে ৬৭ জন, সিএমএমে ১৪৩ জন, সিজিএমে ২৩ জন এবং জেলা জজ কোর্টে ২৪ জন দায়িত্ব পালন করেন। ৪৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে প্রতিদিন ১০ জন আসেন বলেও জানান তিনি। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কোর্টের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, আমরা যে জনবল নিয়ে কাজ করছি তারা যেন আরও সতর্কভাবে কাজ করেন সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশেষ করে কোর্টের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন দেশের সবার নজরে থাকে। আলোচিত-সমালোচিত সরকারি বড় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এখানে আসেন। আদালত প্রাঙ্গণে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ও ভীতি দূরীকরণে কী ভূমিকা নেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পূর্বের কোনও ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে সম্পর্কে আমরা সজাগ আছি। যতজন জনবল আছে তাদের প্রতিদিন সকালে ব্রিফ করছি। এছাড়াও যারা সিনিয়র অফিসার আছেন তারা এসব ঘুরে ঘুরে তদারকি করছেন। কোনও কারণে ফোর্স বাড়ানোর প্রয়োজন হলে আমাদের সিনিয়র কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সদয় আছেন। আমরা বাড়িয়ে নিতে পারবো। দায়িত্বরত পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা পুরো এলাকার নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটা যথেষ্ট। কিন্তু সত্যি বলতে সবাইকে সব সময় সবখানে পাওয়া যায় না। তারা বিভিন্ন কাজে মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্ন থাকেন। এ জন্য একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে এটা সমস্যা হয়ে যায়। পুলিশের এই উপ-কমিশনার বলেন, সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে করে কোনও অস্থিতিশীল অবস্থা যেন না ঘটে সেটিও আমরা কড়া নজরে রাখছি। উল্লেখ্য, আদালতের বিচারপ্রার্থী শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈফ মামুন হত্যার পরদিন ১১ নভেম্বর ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে গুলি করে হত্যার প্রেক্ষাপটে আদালতপাড়ায় সৃষ্ট আতঙ্ক এবং নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির ৩৭টি আদালতের বিচারক এবং ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানার মামলা পরিচালনার কাজ করেন কোর্টগুলোর বিচারকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা। আর সেগুলো করতে মাঝে-মধ্যে রাত হয়ে যায়। যেহেতু এখানে অনেক বড় ধরনের মামলার রায় হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বাসায় ফেরার পথে নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ চিঠিতে বিচারকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপিকে আরও সতর্কতার আহ্বান জানানো হয়। প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে বিচারকের বাসভবনে ঢুকে তার ছেলেকে হত্যার ঘটনায় সারা দেশের বিচারকদের সার্বিক নিরাপত্তার দুই দাবি নিয়ে সম্প্রতি বিবৃতি দিয়েছি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স